শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

সাংবাদিকতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পত্রিকা এবং অতঃপর মান...

দৈনিক চাঁপাই চিত্র [প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী]
চাঁপাইনবাবগঞ্জ; ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫


১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দৈনিক পত্রিকা ‘চাঁপাই চিত্রে’র প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী বার্তা সম্পাদক ইমতিয়াজ ফেরদৌস সুইট লেখা চেয়েছেন এই অধমের কাছে। তাকে বলেছিলাম, জেলার সাংবাদিকতা এবং পত্রপত্রিকাগুলোর গুণগত মান, মেকআপ ইত্যাদি বিষয়ের ওপরই লিখতে চাই। তিনি ছাপাতে রাজি হয়েছিলেন। এমনিতেই চাঁপাই চিত্রে নিয়মিত লেখার চেষ্টা করছি; কিন্তু ভারতের কলকাতায় মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসা চলার কারণে নিয়মিত করে উঠতে পারেনি। সে প্রসঙ্গ থাক। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতা কিংবা পত্রপত্রিকার গুণগত মান নিয়ে লেখার দুঃসাহস আমার নেই। আমার চেয়ে ভালো বলার আরো অনেকেই আছেন জেলায় বলে মনে করি। তবে যতটুকু জানি, বুঝি কিংবা ঢাকায় সাংবাদিকতা করার দরুন যা শিখেছি বা শিখতে পেরেছি তার আলোকে জেলার পত্রিকাগুলো নিয়ে আজ কিছু বলার চেষ্টা করবো, অবশ্যই সংক্ষেপে। আমার সাংবাদিকতা জীবনের পুরোটা বলতে গেলে পত্রিকার অনেক পরিসর দরকার। সে দিকে যাবো না, শুধু জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। সত্যি বলতে কি, জেলার কথা লিখতেও বিস্তৃত পরিসর দরকার। তাই পুরোটা হয়তো তুলে ধরা সম্ভব হবে না। আগামীতে এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখার ইচ্ছে রয়েছে, যদি চাঁপাই চিত্র লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী হয় তবে! আর এ লেখার মধ্যে তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে, সে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল।

প্রথমে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের অবতারণা করতে চাই। তাতে বলতে সুবিধাও আছে। চাঁপাই চিত্রের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যায় সাংবাদিকতা জীবনের কিছু প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আর এ লেখায় আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রথম হাতেখড়ি যার কাছে, যিনি আমাকে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করিয়েছেন তাকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। স্কুলজীবনেই কবিতা, গল্প লেখার শুরু হলেও নাচোল রেলওয়ে বুক স্টলের (বর্তমানে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অবস্থিত) কর্ণধার সংবাদপত্র এজেন্ট হান্নান কাকার কাছেই সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি আমার। তার বুকস্টলে আড্ডা দিতে দিতেই সাংবাদিক হয়ে ওঠা। সময়টা ১৯৯২ সালের মাঝামাঝি। শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর নাচোল ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হই। নাচোলে থাকার সময় তিনিই আমাকে সংবাদপত্রে লেখালেখির জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার হাত ধরেই শুরু। আর সাংবাদিকতায় গতি দিয়েছেন আমার বাবা সাবেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ। এদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। তারা ওই সময় ওটুকু না করলে আজ হয়তোবা আমার সাংবাদিক হয়ে ওঠা হতো না! আর সত্যিকার সাংবাদিক হয়ে ওঠতে পেরেছি বিবিসিখ্যাত শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক আতাউস সামাদ স্যার ও ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর সাহচর্যে। বলা প্রয়োজন, আতাউস সামাদ স্যার সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘এখন’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এক বছরেরও বেশি। দায়িত্বে থাকাকালেই তিনি পত্রিকাটি বিক্রি করে দেন। আর আমিও সেখান থেকে ছেড়ে চলে আসি। পত্রিকা বিক্রির বছর দুয়েকের মধ্যে তিনি মারা যান। আজ এ লেখায় স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। 

১৯৯২ সালে সাংবাদিকতার শুরু ঢাকার সাপ্তাহিক ‘এ দিন’ পত্রিকার মাধ্যমে। সম্পাদক ছিলেন সম্ভবত রামকিশোর মহলানবিশ। আরো অন্যান্য পত্রিকায় টুকটাক লেখা পাঠাতাম। তবে আনুষ্ঠানিক সাংবাদিকতা কিংবা সাংবাদিক হিসেবে নাচোলে পরিচিতি এনে দেয় জেলার সাপ্তাহিক ‘সীমান্তের কাগজ’, যা প্রকাশ হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ২৩ জুন। এর সঙ্গে জড়িতও ছিলাম অনেক দিন। জাফরুল ভাই, কামাল ভাই (চাঁপাই চিত্রের সম্পাদক), ডাবলু দা ও রফিক ভাই— চারজন তরুণ যুবকের প্রয়াস ছিল সীমান্তের কাগজ। বলতে দ্বিধা নেই, সে সময় পত্রিকাটি যথেষ্টই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। পরবর্তীতে কামাল ভাই বেরিয়ে যান। কী কারণে, তা অবশ্য কখনোই জানার চেষ্টা করিনি। সে সময় আরো কিছু সাপ্তাহিক ছিল— সৈয়দ নাজাত হোসেন সম্পাদিত ‘নবাবগঞ্জ বার্তা’, ডিএম তালেবুন নবী সম্পাদিত ‘চাঁপাই সংবাদ’ ও মো. শহীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘বীরবার্তা’। এরপর বের হয় গোলাম মোস্তফা মন্টু সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘মহানন্দা’, মিজানুর রহমান কুটু সম্পাদিত ‘বিশেষ প্রতিবেদন’ ও জনাব আলী সম্পাদিত ‘সোনামসজিদ’। এসব সাপ্তাহিক এখন আর চোখে পড়ে না। কবে থেকে এসব পত্রিকা (সীমান্তের কাগজ, সোনামসজিদ বাদে) বন্ধ হয়েছে, সে তথ্য আমার জানা নেই। পরবর্তীতে আরেকটি সাপ্তাহিক জেলায় অনেকদিন টিকে ছিল— গৌড় সংবাদ। প্রকাশ হয়েছিল সম্ভবত ১৯৯৭ সালে। জেলার এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটিই একটানা এক যুগ প্রকাশ হবার পর বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকাতেই এটির সব কাজ হতো প্রকৌশলী মাহতাব উদ্দিনের সম্পাদনায়। ১৯৯৯ সালে কিছুদিন ঢাকায় গৌড় সংবাদে কাজ করেছি। তবে কাজ না করলেও পত্রিকাটিতে আমার লেখা নিয়মিত ছাপা হতো, যা আমাকে জেলায় একনামে পরিচিতি এনে দেয় বা দিয়েছিল। এজন্য গৌড় সংবাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। একসময় গৌড় সংবাদও বন্ধ হয়ে যায়। 

জেলায় এখন নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে ছয়টি পত্রিকা বের হচ্ছে— চারটি দৈনিক ও দুটি সাপ্তাহিক। চারটি দৈনিকই নিয়মিত বের হচ্ছে— ‘চাঁপাই চিত্র’, ‘গৌড় বাংলা’, ‘চাঁপাই দর্পণ’ ও ‘চাঁপাই দৃষ্টি’। সাপ্তাহিক দুটি ‘সীমান্তের কাগজ’ ও ‘চাঁপাই প্রতিদিন’ শুনেছি অনিয়মিতভাবেই প্রকাশ হচ্ছে। গুণগত মান কিংবা খবরের বৈচিত্র্য কিংবা মেকআপ বিষয়ে আলোচনা থেকে সাপ্তাহিক দুটিকে বাইরে রাখছি। চারটি দৈনিকের অবস্থান নিজের কাছে মনে হয়েছে— প্রথমত চাঁপাই চিত্র, দ্বিতীয়ত গৌড় বাংলা, তৃতীয়ত চাঁপাই দৃষ্টি এবং চতুর্থত চাঁপাই দর্পণ। আশা করি, আমার এ মতের সঙ্গে অনেকেই সহমত প্রকাশ করবেন। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, পরের দৈনিক দুটি অনেক পিছিয়ে। বাজারে নিজস্ব অবস্থান বা স্বকীয়তা তুলে ধরতে গেলে অবশ্যই উন্নতি করা প্রয়োজন আছে। আর জেলার পত্রিকার মান নিয়ে এ ধরনের মতামত তুলে ধরার জন্য সম্পাদকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তবে যা বাস্তব, যা সত্য তাকে মেনে নেয়াটাই যুক্তিযুক্ত। তাতে কাজের গতি বাড়ে বৈকি।

পত্রিকার মেকআপ বা সৌন্দর্যায়নের দিক থেকে সর্বাগ্রে এগিয়ে থাকবে চাঁপাই চিত্র। বলা যায়, পরিচ্ছন্ন একটি কাগজ। যদিও এ পত্রিকার মেকআপে ঢাকার দৈনিক যুগান্তরের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। সেটা দোষের কিছু নই। ভালোকে অনুকরণ করাটাই স্বাভাবিক। জেনেছি ঢাকায় যুগান্তরে কাজ করা অলিউজ্জামান রুবেল পুরোদস্তর এর সঙ্গে জড়িত। কাজেই মেকআপ যুগান্তরের মতো হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তবে চাঁপাই চিত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনগুলোতে অতিরিক্ত রিভার্স ব্যবহার করার কারণে পত্রিকা কিছুটা ভারি হয়ে ওঠে অনেক সময়। সাদাকালো ছাপার জন্যই এরকম হয়ে থাকে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এক্ষেত্রে পত্রিকা কতৃর্পক্ষের উচিত, বিজ্ঞাপনদাতাদের বোঝানো যে সাদাকালো পত্রিকায় রিভার্স ব্যবহার করলে বিজ্ঞাপনের সৌন্দর্য হানি হতে পারে। 

চাঁপাই চিত্রে অধিকাংশ সময় নিউজ ট্রিটমেন্টে দুর্বলতা লক্ষ করা যায়। অনেক সংখ্যায় আবার ‘সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত’ খবরকেও লিড নিউজ করতে দেখা গেছে। সভা-সেমিনারের খবরও লিড হতে পারে। সেক্ষেত্রে কারো ভালো কোনো বক্তব্যকে কোট করে লিড নিউজ করলে পাঠক শিরোনাম পড়েই নিউজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। আর একদিনেই দুটি বিশেষ নিউজ না প্রকাশ করে পরপর দিলে লিড নিউজের ঘাটতি অনেকাংশেই দূর হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে অনেক সংখ্যার কথা তুলে ধরা যায়। তবে বোঝানোর জন্য এখানে দুটি সংখ্যার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। 

একটি সংখ্যা হচ্ছে, ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবরের ২৩তম সংখ্যা। সে সংখ্যায় ‘আনন্দ-উৎসবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত’ শিরোনামের খবরটি পাঁচ কলামে লিড নিউজ হিসেবে ছাপা হয়। ওই সংখ্যায় লিডের ডান পাশে তিন কলামে ছাপা হয় ‘ঈদের ছুটিতে ভেঙ্গে পড়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা : একজন চিকিৎসক সামলিয়েছেন জরুরি ও আন্তঃবিভাগ’ শিরোনামের খবরটি। আরেকটি খবর ছাপা হয়েছিল ‘সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের সতর্ক নজরদারি : চামড়া চোরাচালানীদের মাথায় হাত’ শিরোনামে। আমার কাছে পরের দুটি খবর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল এবং এর যে কোনো একটিকে নিঃসন্দেহে লিড নিউজ করা যেতে পারত। আরেকটি বিষয় অবশ্য দৃষ্টিকটু লেগেছিল তাহলো, পাশাপাশি দুটি হেডিংয়ে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ’ শব্দের ব্যবহার। যে কোনো একটি হেডিংয়ে ‘জেলায়’ বা ‘জেলা’ ব্যবহার করলে আরো সুন্দর হতো।

দ্বিতীয় সংখ্যাটি হচ্ছে, চলতি বছরের ২৩ আগস্টের ৩২৬তম সংখ্যা। সে সংখ্যায় প্রধানমন্ত্রীর খবর লিড নিউজ করা হয়েছে। সেদিন অবশ্য নিউজের খরা ছিল তা বোঝা যায়। কেননা শেষ পৃষ্ঠায় জেলার কোনো খবরই প্রকাশিত হয়নি। আর প্রথম পৃষ্ঠায় মোট ১২টি নিউজের মধ্যে ৬টি ছিল স্থানীয়। তারপরও বলব, সেদিন টেকনিক্যাল লিড করা যেতে পারত (বি. দ্র. টেকনিক্যাল লিড সম্পর্কে নিচের দিকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে)। গোদাগাড়ীর একটা খবর সেদিন ছাপা হয়েছিল ‘বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি মেলেনি গোদাগাড়ীর বুলবুলির’ (শিরোনামে শুধু বুলবুলি ছিল)। এই ঘটনাটি প্রথম দুই কলামে বক্স ট্রিটমেন্ট দিয়ে টেকনিক্যাল লিড করে চালিয়ে দেয়া যেত। আশা রাখব, কতৃর্পক্ষ আগামী দিনে এসব বিষয়গুলো খেয়াল করবে। 

তবে চাঁপাই চিত্র সম্পর্কে যা বলা হলো, তা জেলার অন্য দৈনিকগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। চাঁপাই চিত্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যেহেতু লিখছি, তাই এদের কথাটাই বেশি তুলে ধরলাম। 

জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে গিয়ে অবশ্য চাঁপাই চিত্র বেশি চোখে পড়েছে। ধরে নেয়া যায়, দৈনিকটি জেলায় অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। তবে এও সত্য যে, একটি পত্রিকার অবস্থান এক বছর দিয়ে বিবেচনা করা কঠিন। কেননা পত্রিকা সুন্দর হচ্ছে, নিউজ ভালো হচ্ছে; কিন্তু একসময় দেখা গেল ধপ করে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেল। সেরকমটি ঘটুক, তা কেউই চান না। আমরা চাই, সব পত্রিকায় জীবিত থাকুক এবং নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করুক। মতাদর্শিক অবস্থান ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু পত্রিকা তার নিজস্বতায় টিকে থাকবে এটা সকলেরই প্রত্যাশা।

পাঠক হিসেবে বলতে পারি, একজন পাঠক প্রথমে পত্রিকার সৌন্দর্যায়নটাই অবলোকন করে, তারপর নিউজের মান। অবশ্য নিউজের মান যে খুব খারাপ হচ্ছে তা বলা যাবে না। উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, বর্তমানের বেশিরভাগ সাংবাদিকই একবার নিউজ টাইপ করার পর দ্বিতীয়বার পড়েও দেখেন না, যা আগে কখনো হতো না। একটা নিউজ ন্যূনতম পাঁচ—দশবার পড়ে চূড়ান্ত করা হতো। এখন তা হয় না। তফাৎটা এখানে। অথচ আগে হাতে লিখতে হতো, এখন কম্পিউটার কম্পোজ। রি-রাইট করার সুযোগ অনেক বেশি, তবু হয় না। যে কারণে নিউজের মানের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। 

ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জেলার দৈনিকগুলোকে স্থানীয় খবরই গুরুত্ব দিতে হবে বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। হয়তো নিউজের ঘাটতি অথবা নিউজ তুলে আনা যাচ্ছে না। আর এখনকার মফস্বল সাংবাদিকরা ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক নিউজই করতে পছন্দ করেন বলে মনে হয়। ইতিবাচক খবর খুব কমই চোখে পড়ে। এটা ঠিক যে, প্রতিদিনই সে ধরনের প্রধান খবর বা লিড নিউজ পাওয়া দুষ্কর জেলার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে সমাধান হলো টেকনিক্যালি কাজ করা। এ ধরনের সমস্যায় পড়লে কীভাবে সমাধান করা যায়, তা ঢাকায় সাংবাদিকতা করতে গিয়ে শিখেছি। এসব ক্ষেত্রে যা করা হয় তা টেকনিক্যাল লিড। একটু পরিষ্কার করে বলছি, কোনো একটি নিউজ তিন কলাম হেডিং করে বোল্ড টাইপ দেয়া হলো। তার নিচে আরেকটি খবর তিন কলাম হেডিং নরমাল টাইপ দেয়া হলো। কোনটি প্রধান খবর তা পাঠকই নির্ধারণ করুক— ভাবটা এরকমই! 

পরিশেষে যা বলবো, সেটা একটু ভিন্ন। তাহলো এটা অনস্বীকার্য যে, দেশের সাংবাদিকরা আজ বহুধা ভাগে বিভক্ত। বাদ নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাও। তবে সেসবের বিশদে যেতে চাই না। সংবাদপত্র যদি সমাজের দর্পণ হয়, তাহলে সাংবাদিকরা সে দর্পণের কারিগর। আর কারিগররা যদি একাট্টা হয়ে চলে তবে কোনো অপশক্তির কাছে কখনোই মাথানত করে চলতে হবে না। সাংবাদিকদের বিভক্তির সুযোগ আজ অনেকেই গ্রহণ করছে। আর এর জন্য দায়ী আমরাই। সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মতাদর্শিক অবস্থান ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু পেশার ক্ষেত্রে একজোট হওয়া দোষের কিছু দেখি না। তাই স্বপ্ন দেখি, জেলার সাংবাদিকরাও একদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজোট হয়ে সামনে এগোচ্ছে। আর সে দিনটির অপেক্ষার প্রহর আজও গুনি...।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন