১৪ এপ্রিল, ২০০৫
আজ ১ বৈশাখ। ক্যালেন্ডারের এই একটি মাত্র দিনকে বাঙালি তার সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করে থাকে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন এ দিনটি পালনে নানা আয়োজন দেখা যায়। আয়োজনের মধ্যে মেলাটাই মুখ্য। মেলায় থাকে দেশীয় কারুশিল্পের সমাহার। থাকে পান্তা-ইলিশের আয়োজন। সঙ্গীত, আবৃত্তি আর নাটকের পাশাপাশি মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকে ১ বৈশাখ। এভাবে চলে আসছে বা যাচ্ছে বছরের পর বছর। সময়ের তালে আয়োজনে বহুমাত্রিকতা যোগ হয় শুধু।
একটা সময় ছিল ১ বৈশাখ মানেই হালখাতার আয়োজন, যা সচরাচর গ্রামাঞ্চলে ঘটতো। পুরনো বছরের হিসাবের খাতা শেষ করে চালু হয় নতুন খাতার। আর নতুন খাতা চালুর জন্য এখনও দেশের সর্বত্র ১ বৈশাখকে বেছে নেয়া হয়। যদিও এখন এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষ প্রাধান্য পাচ্ছে। এসবই সময়ের ফলাফল, হিসেবের ফলাফল। যেমন- এখন ১ বৈশাখের মেলা মানে জুয়ার আসর, ভাগ-বাটোয়ারার আসরই মুখ্য। পরদিনের পত্রিকায় এমনটি খবরই পাওয়া যায়। মেলা নিয়ে আবার কোথাও কোথাও চলে রাজনৈতিক দলাদলি। একই বিষয় অর্থাৎ ভাগ-বাটোয়ারা। আর এটার সমাধান না হওয়াতে কোনো কোনো স্থানে মেলা, বৈশাখী আয়োজন বন্ধও থেকেছে। এরপর তো আছে মৌলবাদীদের হুঙ্কার ‘দেশটা রসাতলে গেল’, ‘বাঙালি মুসলমান বেলেল্লাপনায় মত্ত হয়ে উঠেছে...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এর উত্তরে বলা যায়, ধর্ম মানুষকে কাছে টানতে পারে না, যতটা ভাষা কিংবা সংস্কৃতি টানতে পারে।
১ বৈশাখ দিন দিন নতুন ফরম্যাটে পালিত হচ্ছে বা নতুন ফরম্যাট যুক্ত হচ্ছে। সেসব ফরম্যাটে বাঙালি সাজে তাতে বাঙালিত্ব কতটুকু থাকে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। সে প্রসঙ্গে যাবো না। আজ ১ বৈশাখে একই নিয়মে ঢাকার রমনার বটমূলে বসবে ছায়ানটের সঙ্গীতের আসর। বসবে মেলা। অন্যত্রও চলবে গান-বাজনা, নাটকের আয়োজন। চলবে পান্তা-ইলিশের বেচাকেনা। চারুকলায় বিনে পয়সায় শরীরে শিল্পীদের আঁকা নববর্ষের বিভিন্ন চিত্র পাওয়া যাবে। আজ অনেক তরুণ-তরুণী তাদের মনের মানুষটিকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবে। ছেলেরা পরবে পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর মেয়েরা পরবে লাল শাড়ি অথবা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। এভাবে নানা আনন্দ-ফূর্তির মধ্য দিয়ে পার হয়ে যাবে আজকের দিনটি। তারপর আবারও প্রতীক্ষা আগামীর জন্য। এভাবেই পার হয়ে এসেছে অনেকগুলো বছর।
১ বৈশাখের আনন্দ-ফূর্তির জোয়ারে চাপা পড়ে গেছে ১০টি লাশ। যারা ২০০১-এর এই দিনে বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের পাশে। হতভাগ্য ১০ জন ছিলেন খুবই সাধারণ ঘরের। কাজেই তাদের ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। স্মরণ করে তো আর আয়োজন মাটি করা যায় না।
আজ রমনার বটমূলে বোমা হামলার ৪ বছর পূরণ হলো। ৪ বছর আগে এ দিনে রমনার বটমূলে ছায়ানটের গান শুনতে আসা দর্শক সারিতে কে বা কারা বোমা হামলা চালালে তাতে ১০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দু’একটি পত্রিকা বিশেষ বুলেটিনও বের করেছিল। প্রতিবাদ জানিয়েছিল কয়েকটি সংগঠনও। কয়েকদিন এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কলম চালাচালিও হয়। তৎকালীন সরকারি এবং বিরোধী দল রমনার বোমা হামলার দায়-দায়িত্ব একে-অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ভারমুক্তি চেয়েছিল সে সময়। ওই পর্যন্তই। এরপরের ঘটনা সবার জানা। অর্থাৎ রমনা অধ্যায়ের যবনিকাপাত ঘটে। যবনিকাপাত এক অর্থে ঘটনার দিনই ঘটে। কেননা ভয়াবহ এ বোমা হামলায় ১০ জনের মৃত্যু ঘটলেও বৈশাখের আয়োজনে কিঞ্চিত পরিমাণও ব্যাঘ্যাত ঘটতে দেখা যায়নি। বড়জোর ঘণ্টাখানেক হয়তো সবকিছু থমকে দাঁড়িয়েছিল। তারপর যথারীতি আবারও মেতে উঠেছিল বৈশাখী আনন্দে। সে দিন ঘটনার পর এ দৃশ্য দেখা গেছে রমনাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে।
অথচ এ বোমা হামলার সার্থক প্রতিবাদ গড়ে উঠতে পারতো সেদিন। বিরোধী দলেরও সুযোগ হয়েছিল এটাকে ইস্যু বানাবার। তারপরও হয়নি। কেন হয়নি তা স্পষ্ট নয়। তবে কারণ হিসেবে যা বলা যায় তাহলো, বটমূলে নিহতরা ছিল দেশের সাধারণ সারির মানুষ। যাদের নামটুকুই ছিল সম্বর। আহামরি কোন পরিচয়ও ছিল না। ছিল না কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি, যা তাদের চেহারা দেখেই বোঝা গিয়েছিল। পরিচয় থাকলে সে দিন হয়তোবা ঢাকা শহরে তোলপাড় হয়ে যেত- একথা বলেছিলাম সে সময় রেডিও তেহরানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে ব্যক্তিগত এক প্রশ্নের জবাবে। এটা সত্য যে, সেদিন কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী অথবা ওই ১০ জনের একজনও যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা শিক্ষক হতেন কিংবা বোমা হামলা দর্শক সারিতে না হয়ে মঞ্চে হতো তাহলে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যেত তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই ঘটেনি এবং এ চার বছরেও রমনার বোমা হামলা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য হয়নি। সেই মামলা এখন হয়তো হিমাগারে।
রমনার ঘটনাকে সামনে রেখে বলা যায়, সর্বত্র এখন পরিচয়ের ছড়াছড়ি। গান গাইতে গেলে পরিচয়, খেলতে গেলে পরিচয়, চাকরি চাইতে গেলে পরিচয়, রাজনীতি করতে গেলে পরিচয়, পত্রিকায় লিখতে গেলেও পরিচয়... এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে পরিচয় লাগে না। এর সঙ্গে এখন যোগ করা যায় মৃত্যুকে। অর্থাৎ মরতে হলেও এখন পরিচয় লাগে। আর পরিচয়হীন হওয়ার জন্যই ওই ১০ জনের মৃত্যুর কোন সুরাহা হয়নি। আগামীতেও হবে না- এমনতর ভাবাই স্বাভাবিক।
ফলে দেশে এখন যত বোমা বা গ্রেনেড হামলা হচ্ছে তার সবগুলোই দিন দিন চাপা পড়ে যাচ্ছে বা চাপা দেয়া হচ্ছে। রমনার আগে ২টি বোমা হামলা হয়েছে। রমনার পরেও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়া হত্যাকা- পর্যন্ত মোট ১৩টি বোমা বা গ্রেনেড হামলা হয়েছে। রমনার আগের এবং পরের ঘটনাগুলোর কোনটিরও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি। বরং সব মামলাগুলো ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে একমাত্র কিবরিয়া হত্যাকা- ছাড়া। তবে এটিও যে ক’দিন পর ফাইলবন্দি হয়ে পড়বে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
দেখার বিষয় হচ্ছে, বোমা বা গ্রেনেড হামলা যত বাড়ছে জনসাধারণের অনুভূতি তত ভোঁতা হচ্ছে এসব ঘটনায়। কেননা সাধারণ মানুষ তথা রাজনৈতিক দলের সাধারণ সমর্থক/কর্মীরা এসব বোমা হামলার শিকার হলেও দেশের বৃহৎ দু’টি দলের এর বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ থাকে না বললেই চলে। কাজেই সাধারণ মানুষ ভেবে নিয়েছে, তাদের মৃত্যুর কোন মূল্য নেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। শুধু রাজনীতির বলি হওয়ার জন্যেই যেন সাধারণ মানুষ। রমনায় বোমা হামলার মৃত্যুর পর যখন বৈশাখী আয়োজনে কোন প্রভাব কিংবা উৎসবে ভাটা পড়ে না এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের যখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না তখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান কিংবা ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেব নিহত হলেও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না। খুবই স্বাভাবিক বিষয় এটি। আর তা রাজনৈতিক দলগুলোরই ফসল। তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-ে চিঁড়ে চ্যাপ্টা সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলের সংস্পর্শ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতেই পছন্দ করে। এ জন্য দায়ী দলগুলোই। জনগণবিমুখ দলগুলোকে জনগণ যেদিন আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলবে সেদিন হয়তো তারা এর সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবে, তার আগে নয়।
একটা সময় ছিল ১ বৈশাখ মানেই হালখাতার আয়োজন, যা সচরাচর গ্রামাঞ্চলে ঘটতো। পুরনো বছরের হিসাবের খাতা শেষ করে চালু হয় নতুন খাতার। আর নতুন খাতা চালুর জন্য এখনও দেশের সর্বত্র ১ বৈশাখকে বেছে নেয়া হয়। যদিও এখন এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষ প্রাধান্য পাচ্ছে। এসবই সময়ের ফলাফল, হিসেবের ফলাফল। যেমন- এখন ১ বৈশাখের মেলা মানে জুয়ার আসর, ভাগ-বাটোয়ারার আসরই মুখ্য। পরদিনের পত্রিকায় এমনটি খবরই পাওয়া যায়। মেলা নিয়ে আবার কোথাও কোথাও চলে রাজনৈতিক দলাদলি। একই বিষয় অর্থাৎ ভাগ-বাটোয়ারা। আর এটার সমাধান না হওয়াতে কোনো কোনো স্থানে মেলা, বৈশাখী আয়োজন বন্ধও থেকেছে। এরপর তো আছে মৌলবাদীদের হুঙ্কার ‘দেশটা রসাতলে গেল’, ‘বাঙালি মুসলমান বেলেল্লাপনায় মত্ত হয়ে উঠেছে...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এর উত্তরে বলা যায়, ধর্ম মানুষকে কাছে টানতে পারে না, যতটা ভাষা কিংবা সংস্কৃতি টানতে পারে।
১ বৈশাখ দিন দিন নতুন ফরম্যাটে পালিত হচ্ছে বা নতুন ফরম্যাট যুক্ত হচ্ছে। সেসব ফরম্যাটে বাঙালি সাজে তাতে বাঙালিত্ব কতটুকু থাকে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। সে প্রসঙ্গে যাবো না। আজ ১ বৈশাখে একই নিয়মে ঢাকার রমনার বটমূলে বসবে ছায়ানটের সঙ্গীতের আসর। বসবে মেলা। অন্যত্রও চলবে গান-বাজনা, নাটকের আয়োজন। চলবে পান্তা-ইলিশের বেচাকেনা। চারুকলায় বিনে পয়সায় শরীরে শিল্পীদের আঁকা নববর্ষের বিভিন্ন চিত্র পাওয়া যাবে। আজ অনেক তরুণ-তরুণী তাদের মনের মানুষটিকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবে। ছেলেরা পরবে পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর মেয়েরা পরবে লাল শাড়ি অথবা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। এভাবে নানা আনন্দ-ফূর্তির মধ্য দিয়ে পার হয়ে যাবে আজকের দিনটি। তারপর আবারও প্রতীক্ষা আগামীর জন্য। এভাবেই পার হয়ে এসেছে অনেকগুলো বছর।
১ বৈশাখের আনন্দ-ফূর্তির জোয়ারে চাপা পড়ে গেছে ১০টি লাশ। যারা ২০০১-এর এই দিনে বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের পাশে। হতভাগ্য ১০ জন ছিলেন খুবই সাধারণ ঘরের। কাজেই তাদের ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। স্মরণ করে তো আর আয়োজন মাটি করা যায় না।
আজ রমনার বটমূলে বোমা হামলার ৪ বছর পূরণ হলো। ৪ বছর আগে এ দিনে রমনার বটমূলে ছায়ানটের গান শুনতে আসা দর্শক সারিতে কে বা কারা বোমা হামলা চালালে তাতে ১০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দু’একটি পত্রিকা বিশেষ বুলেটিনও বের করেছিল। প্রতিবাদ জানিয়েছিল কয়েকটি সংগঠনও। কয়েকদিন এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় কলম চালাচালিও হয়। তৎকালীন সরকারি এবং বিরোধী দল রমনার বোমা হামলার দায়-দায়িত্ব একে-অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ভারমুক্তি চেয়েছিল সে সময়। ওই পর্যন্তই। এরপরের ঘটনা সবার জানা। অর্থাৎ রমনা অধ্যায়ের যবনিকাপাত ঘটে। যবনিকাপাত এক অর্থে ঘটনার দিনই ঘটে। কেননা ভয়াবহ এ বোমা হামলায় ১০ জনের মৃত্যু ঘটলেও বৈশাখের আয়োজনে কিঞ্চিত পরিমাণও ব্যাঘ্যাত ঘটতে দেখা যায়নি। বড়জোর ঘণ্টাখানেক হয়তো সবকিছু থমকে দাঁড়িয়েছিল। তারপর যথারীতি আবারও মেতে উঠেছিল বৈশাখী আনন্দে। সে দিন ঘটনার পর এ দৃশ্য দেখা গেছে রমনাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে।
অথচ এ বোমা হামলার সার্থক প্রতিবাদ গড়ে উঠতে পারতো সেদিন। বিরোধী দলেরও সুযোগ হয়েছিল এটাকে ইস্যু বানাবার। তারপরও হয়নি। কেন হয়নি তা স্পষ্ট নয়। তবে কারণ হিসেবে যা বলা যায় তাহলো, বটমূলে নিহতরা ছিল দেশের সাধারণ সারির মানুষ। যাদের নামটুকুই ছিল সম্বর। আহামরি কোন পরিচয়ও ছিল না। ছিল না কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি, যা তাদের চেহারা দেখেই বোঝা গিয়েছিল। পরিচয় থাকলে সে দিন হয়তোবা ঢাকা শহরে তোলপাড় হয়ে যেত- একথা বলেছিলাম সে সময় রেডিও তেহরানের বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে ব্যক্তিগত এক প্রশ্নের জবাবে। এটা সত্য যে, সেদিন কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী অথবা ওই ১০ জনের একজনও যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা শিক্ষক হতেন কিংবা বোমা হামলা দর্শক সারিতে না হয়ে মঞ্চে হতো তাহলে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যেত তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই ঘটেনি এবং এ চার বছরেও রমনার বোমা হামলা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য হয়নি। সেই মামলা এখন হয়তো হিমাগারে।
রমনার ঘটনাকে সামনে রেখে বলা যায়, সর্বত্র এখন পরিচয়ের ছড়াছড়ি। গান গাইতে গেলে পরিচয়, খেলতে গেলে পরিচয়, চাকরি চাইতে গেলে পরিচয়, রাজনীতি করতে গেলে পরিচয়, পত্রিকায় লিখতে গেলেও পরিচয়... এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে পরিচয় লাগে না। এর সঙ্গে এখন যোগ করা যায় মৃত্যুকে। অর্থাৎ মরতে হলেও এখন পরিচয় লাগে। আর পরিচয়হীন হওয়ার জন্যই ওই ১০ জনের মৃত্যুর কোন সুরাহা হয়নি। আগামীতেও হবে না- এমনতর ভাবাই স্বাভাবিক।
ফলে দেশে এখন যত বোমা বা গ্রেনেড হামলা হচ্ছে তার সবগুলোই দিন দিন চাপা পড়ে যাচ্ছে বা চাপা দেয়া হচ্ছে। রমনার আগে ২টি বোমা হামলা হয়েছে। রমনার পরেও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়া হত্যাকা- পর্যন্ত মোট ১৩টি বোমা বা গ্রেনেড হামলা হয়েছে। রমনার আগের এবং পরের ঘটনাগুলোর কোনটিরও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি। বরং সব মামলাগুলো ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে একমাত্র কিবরিয়া হত্যাকা- ছাড়া। তবে এটিও যে ক’দিন পর ফাইলবন্দি হয়ে পড়বে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
দেখার বিষয় হচ্ছে, বোমা বা গ্রেনেড হামলা যত বাড়ছে জনসাধারণের অনুভূতি তত ভোঁতা হচ্ছে এসব ঘটনায়। কেননা সাধারণ মানুষ তথা রাজনৈতিক দলের সাধারণ সমর্থক/কর্মীরা এসব বোমা হামলার শিকার হলেও দেশের বৃহৎ দু’টি দলের এর বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ থাকে না বললেই চলে। কাজেই সাধারণ মানুষ ভেবে নিয়েছে, তাদের মৃত্যুর কোন মূল্য নেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। শুধু রাজনীতির বলি হওয়ার জন্যেই যেন সাধারণ মানুষ। রমনায় বোমা হামলার মৃত্যুর পর যখন বৈশাখী আয়োজনে কোন প্রভাব কিংবা উৎসবে ভাটা পড়ে না এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের যখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না তখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান কিংবা ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেব নিহত হলেও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না। খুবই স্বাভাবিক বিষয় এটি। আর তা রাজনৈতিক দলগুলোরই ফসল। তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-ে চিঁড়ে চ্যাপ্টা সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলের সংস্পর্শ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতেই পছন্দ করে। এ জন্য দায়ী দলগুলোই। জনগণবিমুখ দলগুলোকে জনগণ যেদিন আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলবে সেদিন হয়তো তারা এর সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবে, তার আগে নয়।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন