৮ নভেম্বর, ২০০৪
২০০২ এর ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে সংঘটিত ন্যক্কারজনক ঘটনার পর গত ২৯ অক্টোবর ২০০৪ রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলে প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো বলা যায়। ৩১ অক্টোবর রবিবার দেশের সবক’টি পত্রিকার মুখ্য খবর ছিল এটি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. ছাত্রী হলের ছাদে সশস্ত্র যুবকের উপস্থিতি, দুই. এর প্রতিবাদ জানালে ছাত্রীদের ওপর হল-শিক্ষকদের হুমকি, তিন. প্রতিবাদ মিছিলে আবারও পুলিশ-বিডিআর, দুই ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার ও শিক্ষকদের হামলা এবং চার. কতিপয় শিক্ষকের প্রতিবাদকারীদের সম্পর্কে কটূক্তি। তবে শিক্ষক কর্তৃক হামলা এবং তাদের কটূক্তিকে কোন পর্যায়ে ফেলা যায় সে বিষয়ে না গিয়ে বলবো, প্রতিবাদের ধরন দেখে এটুকু উপলব্ধি করা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ একদিনের না। অনেকদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যেন ৩০ অক্টোবর ভোরে বিস্ফোরিত হয়। ছাত্রীদের শিক্ষকদের অবরোধ করে রাখা, হল ভাংচুর করা, গেস্টরুমের সোফায় আগুন ধরিয়ে দেয়া সর্বোপরি ভোর সাড়ে চারটায় রাবির প্রতিটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে বের হয়ে আসা অন্থত তাই প্রমাণ করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের তৎপরতা ব্যাপক- এ কথা সর্বজনবিদিত। এর আগে অন্যান্য সংগঠনের এক-আধটু তৎপরতা থাকলেও জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রশিবির একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। যার চিত্র দেখা যায়, রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশিরভাগ সময় ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। তবে এ ছাত্র সংগঠনটির এহেন তৎপরতা বেশি মাত্রায় শুরু হয় ’৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। সে সময় বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর লেলিয়ে দেয়া পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রশিবির কুয়াশাঢাকা ভোরে ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের ওপর নারকীয় তা-ব চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিলো।
যাক, ফিরে আসি রাবির তাপসী রাবেয়া হলের ঘটনায়। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ২৯ অক্টোবর রাতে। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, ওইদিন রাতে রাবির তাপসী রাবেয়া হলের ছাদে ৩ জন সশস্ত্র যুবককে দেখে হলের ছাত্রীরা চিৎকার করে ওঠে। ছাত্রীদের চিৎকার কর্তব্যরত গার্ডদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি (!)। পরে ছাত্রীরা হল প্রভোস্টকে ফোন করে হলে আসার অনুরোধ জানালে প্রভোস্ট প্রক্টরসহ ফোনের দেড় ঘণ্টা পর হলে আসেন এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের আগেই প্রভোস্ট ও প্রক্টর হল ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলে, ‘কে চোর দেখেছে? তাকে চোর দেখার প্রমাণ দিতে হবে। না হলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কি হাস্যকর কথা! চোর দেখার প্রমাণ দিতে হবে! তবে এ সমস্ত শিক্ষককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তাঁদের হয়তো বিশ্বাস হবে না। কেননা তাঁদের চোখ শুধু কালো কাপড়ই নয়, দলীয় কাপড় দিয়েও ঢাকা।
ঘটনা বলতে কিন্তু ওটুকুই। পরের ঘটনা যা ঘটেছে তা পত্রিকা পড়ে অনেকেই জানতে পেরেছেন। কাজেই সে বিষয়ে আর যাচ্ছি না।
তবে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয় তা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমস্ত ঘটনায় শিক্ষকদের সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া। ২০০২-এর ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ঘটনায়ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের বিরূপ আচরণ দেখা গেছে। তদ্রƒপ আচরণ রাবিতেও দেখা গেল, দেখা গেল আরো বেশি নগ্নভাবে। বলতে দ্বিধা নেই যে, এ সমস্ত শিক্ষক ক্ষমতার লেজ ধরে শিক্ষকতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন বিধায় ভুলে গেছেন ‘শিক্ষক’ পদের মর্যাদা। রাবির ভিসির এ ঘটনার কোন সুরাহা না করে বিদেশ সফরে যাওয়া এবং ক’জন শিক্ষক ছাত্রীদের ওপর যে মন্তব্য করেছেন- সেসব ঘটনা থেকেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
স্বৈরাচার এরশাদের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের এরকম কোনো ভূমিকার খবর শুনতে পাইনি যতোটা গণতন্ত্র আসায় শুনতে পাচ্ছি কিংবা দেখতে পাচ্ছি। বরঞ্চ গণতন্ত্র আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে নির্লজ্জ দলীয়করণের মনোভাব চালু হয়েছে- যা বাড়ছে বৈ কমছে না। এবং এঁদের কোনো আলোচনা, কথাবার্তা, জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য-বিবৃতি এখন আর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না সাধারণ মানুষের কাছে, তাঁদের দলভুক্ত হবার কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সমস্ত আন্দোলনে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। তাহলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচীতে পুলিশ-বিডিআর লেলিয়ে দেয়া। পাশাপাশি থাকে সরকারদলীয় ক্যাডারদের মহড়া। বিগত দুই সরকারের আমলেই এরকমটি দেখা গেছে। সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে এসব অরাজকতা করার সাহস পায় তারা। শিক্ষাঙ্গনে এরা নানান অপরাধ করে বেড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী না হয়েও হলে রাজত্ব করে। এই-ই চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পড়াশোনা তো লাটে উঠেছে ধীরে ধীরে। এ সুযোগে সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার দিকে তাকালে এটা অনুমান করা যায়। কিন্তু এর ভুক্তভোগী হচ্ছে নি¤œ মধ্যবিত্ত ঘরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এবার আসা যাক ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে। ২৩ জুলাইয়ের শামসুন্নাহার হলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ আন্দোলন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেই আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার আগেই তা দমে যায়। অথচ সে সময়ের একটি বিক্ষোভ মিছিল দেখে মন্তব্য করা হয়েছিল, ’৫২ পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণকালের বিক্ষোভ মিছিল। তারপরও সে আন্দোলন খুব একটা এগোতে পারেনি। যদিও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নামমাত্র কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছিল।
’৯২-এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে না ওঠার পেছনে কয়েকটি কারণ বিদ্যমান। তাহলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ আসে গ্রাম থেকে। যাদের অধিকাংশই টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে থাকে। তাদের কাছে কোন আন্দোলন ন্যায্য হলেও পিছুটান থাকে। কেননা আন্দোলন করে তাদের কিছু হলে সে দায়-দায়িত্ব কে বহন করবে- এ প্রশ্ন থেকেই যায়। এ সব শিক্ষার্থী পরিবারের আশা-ভরসা হিসেবে তৈরি হয়। কাজেই পরিবারের কথা ভেবে তারা এগোতে পারে না। সম্মিলিতভাবে কিছুটা এগিয়ে গেলেও আবার দলীয় মদদপুষ্ট কিছু শিক্ষকের তাদের প্রতি বিরূপ আচরণের কারণে পারে না। কারণ, এসব আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের প্রত্যেককে চিনে রাখা হয় এবং তাদের একাডেমিক ফলাফলের সময় ওই সমস্ত শিক্ষকরা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ঘটান বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অনেককেই এভাবে দাবিয়ে রাখেন শিক্ষকরা। ন্যায্য দাবি আদায়ের একটা নির্ধারিত প্ল্যাটফরম দাঁড় করাতে চাইলেও বলা হয়, এসব করে কোনো লাভ নেই। যারা এগুলো করে তারা শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করতে চায়। কিন্তু সরকারী দল বিএনপি কিংবা বিরোধী দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ক্ষমতার লড়াইয়ে সংঘর্ষে নামলে এ শিক্ষকদের বলতে শোনা যায় না যে, শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে। যাই হোক, যে কথা বলছিলাম। অর্থাৎ আন্দোলন একটু চাঙ্গা হলেই শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে ওঠেপড়ে লাগেন ঐ শ্রেণীর শিক্ষকরা। যার ফলে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের ফলাফলের কথা ভেবে আন্দোলন থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হয়। যার নমুনা দেখা গেছে ২৩ জুলাইয়ের শামসুন্নাহার হলের ঘটনায়।
শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত করতে না পারলে সরকার এবং বিরোধী উভয় দল তথা শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলাফলটা দাঁড়ায় এই যে, ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য শিক্ষকদের উপেক্ষা করতে পারলেও এসব ক্যাডারদের শারীরিক হুমকি উপেক্ষা করতে পারে না শিক্ষার্থীদের অনেকেই। এ কারণেও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেকে ছিটকে পড়ে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ। বিগত আন্দোলনে তাই দেখা গেছে। এক্ষেত্রেও একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো। তাহলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য যে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ তাতে একাত্মতা প্রকাশ না করে প্রতিহত করার চেষ্টাই করেছে বারবার। যাওবা একাত্মতা প্রকাশ করেছে, তা শুধুমাত্রই ক্ষমতাকেন্দ্রিক। ক্ষমতার বাইরে এরা কিছু ভাবতেই চায় না। ভুলে যায় তারা ছাত্র। ক্ষমতার অদলবদলে এদের ভোল পাল্টায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্ত মানিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠলে ছাত্রলীগ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কেননা মানিক ছিল ছাত্রলীগ সমর্থক। আবার ২৩ জুলাইয়ের শামসুন্নাহার এবং রাবির তাপসী রাবেয়া হলের ঘটনায় গড়ে ওঠা আন্দোলনে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ কিছু শিক্ষক তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে উঠছে না।
এবার আসছি আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম প্রসঙ্গে। এটা সত্য যে, কোনো সঙ্কট মোকাবেলায় রাজনৈতিক প্রকৃতির লড়াইয়ের মাধ্যমে তা করতে হয়। আর এজন্য চাই নির্ধারিত একটি ব্যানার বা প্ল্যাটফরম। যেখানে সমবেত হয়ে সকলে আন্দোলন গড়ে তুলবে। ২৩ জুলাই শামসুন্নাহার হলে বহিরাগতদের বের করার জন্য যে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল ঐ হলের ছাত্রীরা, তা দমনে রাতের বেলায়ই হলের তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় এ দেশের পুলিশ বাহিনী ছাত্রীদের ওপর যে তা-ব চালিয়েছিল তার প্রতিবাদে রাতেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সারাদেশের মানুষও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। সেদিন তারা গড়ে তুলেছিল ‘নির্যাতন বিরোধী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’ নামে একটি ব্যানার। এই ব্যানারের ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে তারা সমবেত হয়েছিল আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য। তবে সে আন্দোলনও বেশি দূর এগোতে পারেনি। কেননা, ওই ব্যানারের অগ্রভাগে কে থাকবে, কারা নেতৃত্ব দিবে- এ নিয়ে কয়েকটি বাম সংগঠনের মধ্যে নীরব লড়াই শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। কোনো আন্দোলন গড়ে তুলবার আগে যখন নিজেদের মধ্যে কোন্দাল সৃষ্টি হয় তখন সে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। ফলে সে সময় আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছিল। হতাশ হয়ে পড়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা পিছিয়ে গিয়েছিল। কারণ, প্রতিবাদ-আন্দোলন কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দরকার। দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। আর সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল না। তারা শুধু প্রতিবাদ জানাতেই একত্রিত হয়েছিল। নেতৃত্ব দিতে নয়। আর নেতৃত্ব দেবার অভ্যেসও তাদের ছিল না। তারপরও ঐ ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি মেনে নিতে বাধ্য করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। আন্দোলনের চাপে তৎকালীন ভিসি আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। লক্ষণীয় হলো, ভিসি পদত্যাগ করলেও বিএনপি সরকারের কাছ থেকে তিনি পুরস্কারস্বরূপ রাষ্ট্রদূত পদটি ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছিলেন।
এসব প্রেক্ষিত বিবেচনা করলে বলা যায়, রাবিতে সংঘটিত ঘটনার প্রতিবাদও বেশি দূর এগোতে পারবে বলে মনে হয় না। যদিও এ লেখার সময় পর্যন্ত ওই ঘটনার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়নি। কেননা, আবারও একই নিয়মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ প্রতিহত করার চেষ্টা চলবে। কাজেই তাপসী রাবেয়া হলে সৃষ্ট ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলন যতোই এগোনোর চেষ্টা করবে, পিছিয়ে পড়বে তার চেয়ে বেশি। এজন্য চাই, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং দলমত নির্বিশেষে নির্দিষ্ট একটা প্ল্যাটফরম, যেখানে দাঁড়িয়ে তারা প্রতিবাদ করবে। যেদিন এটা সম্ভব হবে সেদিনই কেবল প্রকৃত আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে- তার আগে নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. ছাত্রী হলের ছাদে সশস্ত্র যুবকের উপস্থিতি, দুই. এর প্রতিবাদ জানালে ছাত্রীদের ওপর হল-শিক্ষকদের হুমকি, তিন. প্রতিবাদ মিছিলে আবারও পুলিশ-বিডিআর, দুই ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার ও শিক্ষকদের হামলা এবং চার. কতিপয় শিক্ষকের প্রতিবাদকারীদের সম্পর্কে কটূক্তি। তবে শিক্ষক কর্তৃক হামলা এবং তাদের কটূক্তিকে কোন পর্যায়ে ফেলা যায় সে বিষয়ে না গিয়ে বলবো, প্রতিবাদের ধরন দেখে এটুকু উপলব্ধি করা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ একদিনের না। অনেকদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যেন ৩০ অক্টোবর ভোরে বিস্ফোরিত হয়। ছাত্রীদের শিক্ষকদের অবরোধ করে রাখা, হল ভাংচুর করা, গেস্টরুমের সোফায় আগুন ধরিয়ে দেয়া সর্বোপরি ভোর সাড়ে চারটায় রাবির প্রতিটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে বের হয়ে আসা অন্থত তাই প্রমাণ করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের তৎপরতা ব্যাপক- এ কথা সর্বজনবিদিত। এর আগে অন্যান্য সংগঠনের এক-আধটু তৎপরতা থাকলেও জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রশিবির একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। যার চিত্র দেখা যায়, রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশিরভাগ সময় ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। তবে এ ছাত্র সংগঠনটির এহেন তৎপরতা বেশি মাত্রায় শুরু হয় ’৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। সে সময় বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর লেলিয়ে দেয়া পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রশিবির কুয়াশাঢাকা ভোরে ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের ওপর নারকীয় তা-ব চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিলো।
যাক, ফিরে আসি রাবির তাপসী রাবেয়া হলের ঘটনায়। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ২৯ অক্টোবর রাতে। পত্রিকান্তরে জানা গেছে, ওইদিন রাতে রাবির তাপসী রাবেয়া হলের ছাদে ৩ জন সশস্ত্র যুবককে দেখে হলের ছাত্রীরা চিৎকার করে ওঠে। ছাত্রীদের চিৎকার কর্তব্যরত গার্ডদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি (!)। পরে ছাত্রীরা হল প্রভোস্টকে ফোন করে হলে আসার অনুরোধ জানালে প্রভোস্ট প্রক্টরসহ ফোনের দেড় ঘণ্টা পর হলে আসেন এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের আগেই প্রভোস্ট ও প্রক্টর হল ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলে, ‘কে চোর দেখেছে? তাকে চোর দেখার প্রমাণ দিতে হবে। না হলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কি হাস্যকর কথা! চোর দেখার প্রমাণ দিতে হবে! তবে এ সমস্ত শিক্ষককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তাঁদের হয়তো বিশ্বাস হবে না। কেননা তাঁদের চোখ শুধু কালো কাপড়ই নয়, দলীয় কাপড় দিয়েও ঢাকা।
ঘটনা বলতে কিন্তু ওটুকুই। পরের ঘটনা যা ঘটেছে তা পত্রিকা পড়ে অনেকেই জানতে পেরেছেন। কাজেই সে বিষয়ে আর যাচ্ছি না।
তবে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয় তা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমস্ত ঘটনায় শিক্ষকদের সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া। ২০০২-এর ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ঘটনায়ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের বিরূপ আচরণ দেখা গেছে। তদ্রƒপ আচরণ রাবিতেও দেখা গেল, দেখা গেল আরো বেশি নগ্নভাবে। বলতে দ্বিধা নেই যে, এ সমস্ত শিক্ষক ক্ষমতার লেজ ধরে শিক্ষকতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন বিধায় ভুলে গেছেন ‘শিক্ষক’ পদের মর্যাদা। রাবির ভিসির এ ঘটনার কোন সুরাহা না করে বিদেশ সফরে যাওয়া এবং ক’জন শিক্ষক ছাত্রীদের ওপর যে মন্তব্য করেছেন- সেসব ঘটনা থেকেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
স্বৈরাচার এরশাদের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের এরকম কোনো ভূমিকার খবর শুনতে পাইনি যতোটা গণতন্ত্র আসায় শুনতে পাচ্ছি কিংবা দেখতে পাচ্ছি। বরঞ্চ গণতন্ত্র আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে নির্লজ্জ দলীয়করণের মনোভাব চালু হয়েছে- যা বাড়ছে বৈ কমছে না। এবং এঁদের কোনো আলোচনা, কথাবার্তা, জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য-বিবৃতি এখন আর বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না সাধারণ মানুষের কাছে, তাঁদের দলভুক্ত হবার কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সমস্ত আন্দোলনে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। তাহলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচীতে পুলিশ-বিডিআর লেলিয়ে দেয়া। পাশাপাশি থাকে সরকারদলীয় ক্যাডারদের মহড়া। বিগত দুই সরকারের আমলেই এরকমটি দেখা গেছে। সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে এসব অরাজকতা করার সাহস পায় তারা। শিক্ষাঙ্গনে এরা নানান অপরাধ করে বেড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী না হয়েও হলে রাজত্ব করে। এই-ই চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পড়াশোনা তো লাটে উঠেছে ধীরে ধীরে। এ সুযোগে সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার দিকে তাকালে এটা অনুমান করা যায়। কিন্তু এর ভুক্তভোগী হচ্ছে নি¤œ মধ্যবিত্ত ঘরের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এবার আসা যাক ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে। ২৩ জুলাইয়ের শামসুন্নাহার হলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ আন্দোলন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেই আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার আগেই তা দমে যায়। অথচ সে সময়ের একটি বিক্ষোভ মিছিল দেখে মন্তব্য করা হয়েছিল, ’৫২ পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণকালের বিক্ষোভ মিছিল। তারপরও সে আন্দোলন খুব একটা এগোতে পারেনি। যদিও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নামমাত্র কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছিল।
’৯২-এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে না ওঠার পেছনে কয়েকটি কারণ বিদ্যমান। তাহলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ আসে গ্রাম থেকে। যাদের অধিকাংশই টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে থাকে। তাদের কাছে কোন আন্দোলন ন্যায্য হলেও পিছুটান থাকে। কেননা আন্দোলন করে তাদের কিছু হলে সে দায়-দায়িত্ব কে বহন করবে- এ প্রশ্ন থেকেই যায়। এ সব শিক্ষার্থী পরিবারের আশা-ভরসা হিসেবে তৈরি হয়। কাজেই পরিবারের কথা ভেবে তারা এগোতে পারে না। সম্মিলিতভাবে কিছুটা এগিয়ে গেলেও আবার দলীয় মদদপুষ্ট কিছু শিক্ষকের তাদের প্রতি বিরূপ আচরণের কারণে পারে না। কারণ, এসব আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের প্রত্যেককে চিনে রাখা হয় এবং তাদের একাডেমিক ফলাফলের সময় ওই সমস্ত শিক্ষকরা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ঘটান বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অনেককেই এভাবে দাবিয়ে রাখেন শিক্ষকরা। ন্যায্য দাবি আদায়ের একটা নির্ধারিত প্ল্যাটফরম দাঁড় করাতে চাইলেও বলা হয়, এসব করে কোনো লাভ নেই। যারা এগুলো করে তারা শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করতে চায়। কিন্তু সরকারী দল বিএনপি কিংবা বিরোধী দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ক্ষমতার লড়াইয়ে সংঘর্ষে নামলে এ শিক্ষকদের বলতে শোনা যায় না যে, শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে। যাই হোক, যে কথা বলছিলাম। অর্থাৎ আন্দোলন একটু চাঙ্গা হলেই শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে ওঠেপড়ে লাগেন ঐ শ্রেণীর শিক্ষকরা। যার ফলে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের ফলাফলের কথা ভেবে আন্দোলন থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হয়। যার নমুনা দেখা গেছে ২৩ জুলাইয়ের শামসুন্নাহার হলের ঘটনায়।
শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত করতে না পারলে সরকার এবং বিরোধী উভয় দল তথা শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়। ফলাফলটা দাঁড়ায় এই যে, ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য শিক্ষকদের উপেক্ষা করতে পারলেও এসব ক্যাডারদের শারীরিক হুমকি উপেক্ষা করতে পারে না শিক্ষার্থীদের অনেকেই। এ কারণেও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেকে ছিটকে পড়ে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ। বিগত আন্দোলনে তাই দেখা গেছে। এক্ষেত্রেও একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো। তাহলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য যে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ তাতে একাত্মতা প্রকাশ না করে প্রতিহত করার চেষ্টাই করেছে বারবার। যাওবা একাত্মতা প্রকাশ করেছে, তা শুধুমাত্রই ক্ষমতাকেন্দ্রিক। ক্ষমতার বাইরে এরা কিছু ভাবতেই চায় না। ভুলে যায় তারা ছাত্র। ক্ষমতার অদলবদলে এদের ভোল পাল্টায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্ত মানিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠলে ছাত্রলীগ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কেননা মানিক ছিল ছাত্রলীগ সমর্থক। আবার ২৩ জুলাইয়ের শামসুন্নাহার এবং রাবির তাপসী রাবেয়া হলের ঘটনায় গড়ে ওঠা আন্দোলনে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ কিছু শিক্ষক তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গঠনমূলক আন্দোলন গড়ে উঠছে না।
এবার আসছি আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম প্রসঙ্গে। এটা সত্য যে, কোনো সঙ্কট মোকাবেলায় রাজনৈতিক প্রকৃতির লড়াইয়ের মাধ্যমে তা করতে হয়। আর এজন্য চাই নির্ধারিত একটি ব্যানার বা প্ল্যাটফরম। যেখানে সমবেত হয়ে সকলে আন্দোলন গড়ে তুলবে। ২৩ জুলাই শামসুন্নাহার হলে বহিরাগতদের বের করার জন্য যে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল ঐ হলের ছাত্রীরা, তা দমনে রাতের বেলায়ই হলের তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় এ দেশের পুলিশ বাহিনী ছাত্রীদের ওপর যে তা-ব চালিয়েছিল তার প্রতিবাদে রাতেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সারাদেশের মানুষও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। সেদিন তারা গড়ে তুলেছিল ‘নির্যাতন বিরোধী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’ নামে একটি ব্যানার। এই ব্যানারের ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে তারা সমবেত হয়েছিল আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য। তবে সে আন্দোলনও বেশি দূর এগোতে পারেনি। কেননা, ওই ব্যানারের অগ্রভাগে কে থাকবে, কারা নেতৃত্ব দিবে- এ নিয়ে কয়েকটি বাম সংগঠনের মধ্যে নীরব লড়াই শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। কোনো আন্দোলন গড়ে তুলবার আগে যখন নিজেদের মধ্যে কোন্দাল সৃষ্টি হয় তখন সে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। ফলে সে সময় আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছিল। হতাশ হয়ে পড়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা পিছিয়ে গিয়েছিল। কারণ, প্রতিবাদ-আন্দোলন কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দরকার। দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। আর সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল না। তারা শুধু প্রতিবাদ জানাতেই একত্রিত হয়েছিল। নেতৃত্ব দিতে নয়। আর নেতৃত্ব দেবার অভ্যেসও তাদের ছিল না। তারপরও ঐ ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি মেনে নিতে বাধ্য করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। আন্দোলনের চাপে তৎকালীন ভিসি আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। লক্ষণীয় হলো, ভিসি পদত্যাগ করলেও বিএনপি সরকারের কাছ থেকে তিনি পুরস্কারস্বরূপ রাষ্ট্রদূত পদটি ঠিকই বাগিয়ে নিয়েছিলেন।
এসব প্রেক্ষিত বিবেচনা করলে বলা যায়, রাবিতে সংঘটিত ঘটনার প্রতিবাদও বেশি দূর এগোতে পারবে বলে মনে হয় না। যদিও এ লেখার সময় পর্যন্ত ওই ঘটনার তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়নি। কেননা, আবারও একই নিয়মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ প্রতিহত করার চেষ্টা চলবে। কাজেই তাপসী রাবেয়া হলে সৃষ্ট ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলন যতোই এগোনোর চেষ্টা করবে, পিছিয়ে পড়বে তার চেয়ে বেশি। এজন্য চাই, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং দলমত নির্বিশেষে নির্দিষ্ট একটা প্ল্যাটফরম, যেখানে দাঁড়িয়ে তারা প্রতিবাদ করবে। যেদিন এটা সম্ভব হবে সেদিনই কেবল প্রকৃত আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে- তার আগে নয়।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন