শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

জনগণের জন্য রাজনীতি নাকি রাজনীতির জন্য জনগণ

বর্ষ ৫, সংখ্যা ১৮-১৯, ১৫ জুন ১৯৯৬


সমস্যা, সমস্যা। শত সমস্যার দেশ এই বাংলাদেশ। যদিওবা সভ্যতার বিকাশে পা বাড়াতে বাংলাদেশ শত সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। না। আর হয়ত পারবে না। গত দু’বছর চলমান আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশ সভ্যতা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক দিক থেকে কমসে কম পঁচিশ-ত্রিশ বছর পিছিয়ে গেল। এর জন্য দায়ী করা যায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে।

অনেকেই স্বীকার করতে নাও পারে। কিন্তু একথা খুবই সত্য যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে না। তাদের মুখে শুধু বড় বড় বুলি জনগণের জন্য। অন্তরে রাজনীতির স্বার্থ হাসিলের জন্য সর্বদাই ব্যস্ত। অন্তত তাদের হিংসাত্মক রাজনীতি তাই প্রমাণ করছে। আর এই রাজনীতির যাঁতাকলে অহরহ পিষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের নিরীহ জনগণ।

রাজনীতি, রাজনীতি। শত রাজনীতির দেশ এই বাংলাদেশ। এই শত রাজনীতির মধ্যে আবার জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণ প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই কারণে যে, সত্যি সত্যিই বংলাদেশে এই জনগণ নামক শব্দটা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ সিদ্ধি করা সহজ হতো না।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কাজেই এখনে জনগণের মতামতের দাম রয়েছে। দাম থাকতে হবে। কিন্তু রাজনীতির জন্য জনগণ তৈরি হয়নি যে, রাজনীতির নিয়মানুসারে জনগণকে চলতে হবে। এটা ঠিক নয়। তবুও বাংলাদেশে তাই ঘটছে। শেখ হাসিনা বলছেন, “আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছি।” অপরদিকে খালেদাও বলছেন, “আমরা জনগণের ডাল-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।”

জানি না হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে জনগণের অধিকার কতটুকু প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। আর খালেদাই বা ক্ষমতায় বসে জনগণের অধিকার কতটুকু রক্ষা করেছে। আজ এটুকু বুঝতে শিখেছি বাংলাদেশের কোন সরকারই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।

তবে এ কথা সত্যি যে দু’নেত্রীর বাক-বিত-ার মাঝে জনগণ এখন অবস্থান করছে। কেননা আন্দোলন না করলেও জনগণ আন্দোলন করছে। ভোট না দিলেও জনগণ ভোট দিচ্ছে। বাংলাদেশে হাসিনাও জনগণ, খালেদাও জনগণ। তাদের দলও জনগণ। যারা বাস করছে তারাও জনগণ। জনগণ থেকেই শত রাজনীতির সৃষ্টি, নেতৃত্বের সৃষ্টি। প্রশ্ন হল, আমরা এখন প্রকৃত জনগণ নির্ধারণ করব কাদেরকে। একটি স্বাধীন দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি নাকি রাজনীতির জন্য জনগণ অপরিহার্য। কোনটা? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করার আচরণই আজ এ প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছে। একজন সচেতন পিতা যেমন সবসময় চিন্তা করেন তার ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়াবার। তেমনি বাংলাদেশের সচেতন জনগণও আশা করে ক্ষমতায় একজন যোগ্য নেতৃত্বের আবির্ভাবের।

কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে জনগণ নিয়ে এত ছিনিমিনি কেন? আশা রাখি আগামী সংখ্যা চিন্তায় কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার তাঁর সুদূরপ্রসারী ভাবনা থেকে এ প্রশ্নগুলোর জবাব দেবেন। পরিশেষে ১৩-১৫ সংখ্যা চিন্তায় সুন্দর পর্যালোচনা লেখার জন্য ফরহাদ মজহারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।


[পাক্ষিক চিন্তা’র বর্ষ ৫, সংখ্যা ১৮-১৯, ১৫ জুন ১৯৯৬ এর পাঠকের পাতায় প্রকাশিত]


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন