বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

সংস্কারের দিকে মনোযোগ বাড়ুক

২৭ আগস্ট, ২০২৪ 

চলতি বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, হয়েছে রাজনীতির পট পরিবর্তন। এক যুগের বেশি সময় দেশের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বিস্ফোরিত হতে দেখেছে দেশবাসী তথা বিশ্ব। ক্ষমতা দূরের কথা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হনআওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতাদের চলে যেতে হয়েছে আত্মগোপনে। দেশের সাধারণ মানুষ এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। দীর্ঘদিনের

রাজনৈতিক গুমোট থেকে ছাড়া পেয়ে তারা যেন বেঁচে গেল। কিন্তু এখনও আমাদের দেশ পুনর্গঠনের কাজ বাকি। সামাজিক সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তাকে কাজে লাগানোর সময় এখনই। 

৮ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকারের শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত কার্যত বাংলাদেশ ছিল সরকারবিহীন। মাঠে ছিল না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষত পুলিশ। ওই সময়ে দেশে কিছু জায়গায় ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটে; যার বেশিরভাগই ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো পড়ে অন্তত সেই ধারণা তৈরি হয়। অথচ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে এবং ব্যাপক লুটতরাজের ঘটনা ঘটতে পারত। সীমাহীন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়লেও দেশবাসী যে ধৈর্য ও ঐক্যবদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে তা এককথায় অসাধারণ। আরেকটু বাড়িয়ে বলতে হয়, শপথ নেওয়ার পরও এক সপ্তাহের মতো দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। এ সময়টুকুতে দেশের শিক্ষার্থীরাই সামলেছেন ট্রাফিকব্যবস্থা। শপথ-পরবর্তী সময়েও দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা চরম সংকটে পড়তে পারত; কিন্তু সাধারণ মানুষের সচেতনতার কারণে দুর্বৃত্তরা সফল হতে পারেনি।

২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথম কর্মদিবসে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্যই দেশবাসীকে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০০৮-এ দুই বছরে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিত্যপণ্যের দাম যে গগনচুম্বী হয়েছিল, তা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল দেশবাসী। সে আলোকেই আশার বাণী শুনিয়েছিলেন তারা। এমনকি সেদিনই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ডিজেলের দাম কমানোর এবং সারে ভর্তুকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আশান্বিত হয়েছিল দেশবাসী। বিগত এক যুগে দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, এটা সত্য। তবে সেগুলো কতটা টেকসই কিংবা জনবান্ধবের উদ্দেশ্যে ছিল, নাকি লুটপাটের জন্যই মেগা প্রকল্প ছিল; তা আস্তে আস্তে সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন আকারে উঠে এসেছে এবং এখন আবার নতুন করে আসছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার অবাধে লুটপাট, দুর্নীতি, দমনপীড়ন, গুম, খুন চালিয়ে যেতে পেরেছে। আর এসবের বৈধতা পাওয়ার জন্য তৈরি করেছিল অনুগত প্রশাসন ও বাহিনী। এদের এমনই দলদাস হিসেবে তৈরি করা হয়েছে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালিয়ে শয়ে শয়ে মেরে ফেললেও এদের বিবেক মানবতার বাণে বিদ্ধ হয়নি।

অন্তর্র্বতী সরকারের বয়স ১৫ দিনই পার হয়নি। এ সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে প্রত্যাশার চাপ তৈরি হয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে। দাবিদাওয়াও উঠছে বিস্তর। কেননা বিগত সরকারের আমলে দেশের এমন কোনো সেক্টর পাওয়া কঠিন যেখানে দুর্নীতি-লুটপাটের চিহ্ন নেই। শিক্ষাব্যবস্থাও চরম সংকটে। তবে এ মুহূর্তে দুটি চরম সংকট মোকাবিলা করাটাই হচ্ছে অন্তর্র্বতী সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এক. আর্থিক এবং দুই. নিরাপত্তা।

১৮ আগস্ট কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, সবকিছু সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে।’ (বাসস ১৮ আগস্ট, ২০২৪) সংস্কার করতে গেলে সময় লাগবে, এ নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও জননিরাপত্তাগত সংস্কারই যে বেশি জরুরি এ নিয়ে সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু জনসচেতনতামূলক নির্দেশনা এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন